ভিনোদ কাম্বলি এই নামটা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে এক সময়কার এক বিস্ময় প্রতিভা। তিনি ছিলেন শচীন তেন্ডুলকরের ছায়াসঙ্গী, মাঠে ও মাঠের বাইরে। প্রতিভায় শচীনের চেয়ে কম ছিলেন না, কিন্তু জীবন তাঁকে খুব তাড়াতাড়ি ভিন্ন পথে নিয়ে যায়। খ্যাতি, টাকা আর তারকাখ্যাতি সব পেয়ে গিয়েছিলেন খুব কম বয়সেই। আর সেখান থেকেই শুরু হয় ভ্রষ্টাচার, যার পরিণতি বলতে গেলে একেবারে ‘অর্জন থেকে অবনতি’।
৯০-এর দশকে যাঁরা ক্রিকেট দেখেছেন, তাঁরা জানেন কাম্বলি কিভাবে বল হাতে নেন এবং বোলারদের দিশেহারা করে দেন। কিন্তু শৃঙ্খলার অভাব আর লাইমলাইটে হারিয়ে যাওয়ার প্রবণতা তাঁর ক্যারিয়ার খুব তাড়াতাড়িই থামিয়ে দেয়।
তবে একটা কথা জানলে হয়তো অবাক লাগবে এই কাম্বলিই একসময় ক্রিকেটকে গুরুত্ব দিয়ে পার্ট-টাইম চাকরির প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, যখন তাঁর আশেপাশের অনেক ক্রিকেটার জীবিকা টিকিয়ে রাখতে ক্রিকেট খেলার পাশাপাশি বিভিন্ন দোকান, ফ্যাক্টরি বা পেট্রোল পাম্পে কাজ করতেন।
সম্প্রতি The Indian Express-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে শচীন-কাম্বলি দুজনেরই ঘনিষ্ঠ বন্ধু সোলি অ্যাডামের মুখে শোনা এক বিস্ময়কর গল্প। সোলি একজন ব্যবসায়ী, আর ক্রিকেটের প্রতি তাঁর ভালোবাসা নিছক প্যাশন নয় প্রায় নেশার মতো। শচীনকে ১৯৯২ সালে ইয়র্কশায়ার ক্লাবে খেলার জন্য তিনিই রাজি করিয়েছিলেন।
তখন কাম্বলি ইংল্যান্ডে ছোটখাটো ক্লাব ক্রিকেট খেলতেন। একদিন সোলির বাড়িতে একত্র হয়েছিল কয়েকজন ভারতীয় ক্রিকেটার। তাঁদের মধ্যে অনেকেই পার্ট-টাইম কাজ করতেন, কারণ ক্লাব ক্রিকেটের উপার্জনে খরচ চালানো সম্ভব ছিল না। তখন এক মুম্বাই ক্রিকেটার কাম্বলিকে প্রশ্ন করেন—"তুমি তো ম্যাচপ্রতি মাত্র ২৫ পাউন্ড পাচ্ছো, সোলির এখানে কিছু কাজ করে নিও না?" কাম্বলির উত্তর ছিল এককথায় চমকপ্রদ: “আমি আর শচীন টেস্ট ক্রিকেট খেলেই টাকা রোজগার করব। চাকরি করলে আমার মনোযোগ নষ্ট হবে।”
সোলি আজও অবাক হয়ে বলেন, “ও তখন টেস্ট ক্রিকেটেও পা রাখেনি, কিন্তু কী অসাধারণ আত্মবিশ্বাস! এমন আত্মবিশ্বাস খুব কম বয়সীদের মধ্যে দেখা যায়।”
তবে দুঃখের বিষয়, এই প্রতিশ্রুতিশীল ক্যারিয়ার বেশিদিন টেকেনি। ১৯৯৩-তে শুরু, আর মাত্র দু’বছরের মাথায় ১৯৯৫-তেই কাম্বলির টেস্ট অধ্যায় শেষ হয়ে যায়। তিনি খেলেছেন মাত্র ১৭টি টেস্ট, করেছেন ১০৮৪ রান, তাও আবার ৫৪.২০ গড় দিয়ে যেখানে রয়েছে দুটি ডাবল সেঞ্চুরি-সহ মোট চারটি শতরান।
আজ কাম্বলি আলোচনায় আসেন মূলত দুর্দশার কারণে। গত বছর গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তখন খরচ চালানোর টাকাটুকুও ছিল না। তা সত্ত্বেও, জীবনের শুরুতে তিনি টাকা নয়, স্বপ্নকেই বেছে নিয়েছিলেন।