ভারতে পণ্য ও পরিষেবা কর, অর্থাৎ জিএসটি, চালু হয়েছে আট বছর আগে। দীর্ঘ প্রায় সতেরো বছরের আলোচনা-পর্যালোচনার পর ২০১৭ সালের ১ জুলাই চালু হয় এই করব্যবস্থা। একাধিক স্থানীয় কর ও উপকর একত্রিত করে তৈরি হয় জিএসটি, যার ফলে দেশের কর কাঠামো অনেকটাই সহজ হয়।
জিএসটি চালুর পর কর রেজিস্ট্রেশন ও সংগ্রহে চোখে পড়ার মতো বৃদ্ধি হয়েছে। গত পাঁচ বছরে জিএসটি থেকে রাজস্ব দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। ২০২০-২১ অর্থবর্ষে যেখানে মোট জিএসটি আদায় ছিল ১১.৩৭ লক্ষ কোটি টাকা, সেখানে ২০২৪-২৫ সালে তা বেড়ে হয়েছে ২২.০৮ লক্ষ কোটি।
বাজেটে জিএসটির অবদান
বর্তমানে দেশের কেন্দ্রীয় বাজেটের প্রায় ৪৪ শতাংশই আসে জিএসটি থেকে। ২০২৫-২৬ সালের বাজেট ধরা হয়েছে ৫০.৬৫ লক্ষ কোটি টাকা। সেই হিসাবে, জিএসটি সরকারের আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস।
রেজিস্ট্রেশনেও নজরকাড়া বৃদ্ধি
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দেশে সক্রিয় জিএসটি রেজিস্ট্রেশনের সংখ্যা ছিল ১.৫১ কোটির বেশি, এবং এই সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। তামাকজাত পণ্য, বিলাসবহুল গাড়ির মতো নির্দিষ্ট কিছু জিনিসের ওপর অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণমূলক করও ধার্য করা হয়।
জিএসটি পরিষদের ৫৫টি বৈঠক
জিএসটির নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে জিএসটি কাউন্সিল, যার সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। এখন পর্যন্ত ৫৫টি বৈঠক হয়েছে, এবং আরও পরিবর্তনের সম্ভাবনা ঘিরে আগ্রহ তুঙ্গে।
সময় মতো পরিবর্তন, ব্যবসায়িক সহায়তাও
জিএসটি চালুর পর নানা পরিবর্তন এসেছে করপ্রণালিতে, যাতে করদাতাদের সুবিধা হয় এবং ব্যবসা আরও সহজ হয়। ২০২৪ সালের মে মাস থেকে এমএসএমই সংস্থাগুলির জন্য চালু হয়েছে TReDS (Trade Receivables Discounting System), যার মাধ্যমে ঋণ পাওয়া এখন অনেকটাই সহজ হয়েছে।
বর্তমান করহার (শ্রেণী অনুযায়ী)
-
৫%, ১২%, ১৮% ও ২৮% এই চারটি মূল স্ল্যাব
-
বিশেষ স্ল্যাব:
-
৩% সোনা, রূপো, হীরা ও গয়নার জন্য
-
১.৫% পলিশ করা হীরার জন্য
-
০.২৫% কাঁচা হীরার জন্য
-
পরবর্তী বৈঠকে নজর
পরবর্তী জিএসটি পরিষদের বৈঠক নিয়ে জোর জল্পনা চলছে। বিশেষ করে স্বাস্থ্যবিমা ও জীবনবিমার উপর ধার্য ১৮ শতাংশ কর কমানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। তাছাড়া, জিএসটি স্ল্যাব পুনর্গঠনের সম্ভাবনাও রয়েছে। এই দুটি বিষয়ে ইতিমধ্যেই মন্ত্রীদের একটি গোষ্ঠী গঠন করা হয়েছে, এবং তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে বলে আশা।
সব মিলিয়ে আট বছর পেরিয়ে জিএসটি এক নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করছে আয় বাড়ছে, নীতিতে বদল আসছে, এবং মানুষ অপেক্ষা করছে, এবার আরও কী বদল আনছে এই গুরুত্বপূর্ণ করব্যবস্থা।