চীনের দাপটে রাশ টানতে দিল্লিতে ভারত-জাপান বৈঠক, নজরে লিথিয়াম ব্যাটারির বিকল্প জোগান

দিল্লিতে এই সপ্তাহে মুখোমুখি হচ্ছে ভারত ও জাপানের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ শিল্প প্রতিষ্ঠান। উদ্দেশ্য একটাই চীনের আরোপিত রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষিতে একসঙ্গে পাল্টা পরিকল্পনা সাজানো। বৈঠকে হাজির রয়েছে প্যানাসোনিক, মিত্সুবিশি, সুমিতোমো এবং আসাহি কাসেই-এর মতো জাপানের বড় বড় কোম্পানিগুলি, যারা সরাসরি যুক্ত রয়েছে বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারি এবং দুর্লভ খনিজ উপাদানের সরবরাহ ব্যবস্থার সঙ্গে।



এই বৈঠকে অংশ নিচ্ছে ভারতের অমারা রাজা ও রিলায়্যান্সের মতো কোম্পানিগুলিও। মূলত আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে একটি বিষয় চীনের বিকল্প হিসেবে কীভাবে লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির নতুন জোগান শৃঙ্খল গড়ে তোলা যায়। পাশাপাশি, লিথিয়াম ও গ্রাফাইটের মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজগুলির নিরাপদ এবং দীর্ঘমেয়াদি উৎস কীভাবে নিশ্চিত করা যায়, তাও আলোচ্য।

চীন বর্তমানে এই খাতের প্রায় ৮০ শতাংশ বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে, ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশ এবং প্রযুক্তিনির্ভর জাপানের জন্য চীনের প্রভাব কিছুটা অস্বস্তির জায়গা। সেই কারণেই দু’দেশ একত্র হয়ে প্রযুক্তিগত গবেষণায় হাত মেলাতে পারে এবং যৌথভাবে বিকল্প ব্যবস্থা তৈরি করার দিকে এগোচ্ছে এই বৈঠক তারই ইঙ্গিত।

এই আলোচনার গুরুত্ব বাড়ছে এপ্রিল মাসের পর থেকেই, যখন চীন দুর্লভ খনিজগুলির রপ্তানিতে কড়াকড়ি আরোপ করে। এর পর থেকেই ভারতীয় সংস্থাগুলোর আমদানি প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন দেখা দেয়। বর্তমানে ভারতের ইভি শিল্প প্রায় ৭৫ শতাংশ ব্যাটারি চীন থেকে আমদানি করে। বাকি অংশ আসে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান থেকে।

ভারত সরকার যদিও ২০২১ সালেই ১৮,১০০ কোটি টাকার প্রোডাকশন-লিঙ্কড ইনসেনটিভ (PLI) প্রকল্প চালু করেছিল দেশের ব্যাটারি উৎপাদন বাড়াতে। ওলা ইলেকট্রিক, রিলায়্যান্স ও রাজেশ এক্সপোর্টসের মতো বড় সংস্থাগুলি সেই প্রকল্পে গিগাফ্যাক্টরি তৈরির ছাড়পত্রও পেয়েছে। কিন্তু বাস্তবে সেই উৎপাদন এখনও গতি পায়নি। নির্ধারিত সময়সীমার তুলনায় পিছিয়েই রয়েছে প্রায় সব ক’টি প্রকল্প।

সব মিলিয়ে, ভারত ও জাপানের এই নতুন উদ্যোগ কতটা বাস্তবায়িত হয়, তা এখনই বলা কঠিন। তবে একসঙ্গে পথ খোঁজার এই প্রচেষ্টা চীনের একচেটিয়া দখলের বিরুদ্ধে এক সাহসী পদক্ষেপ বলেই ধরা যায়।

Previous Post Next Post