ভেনিসের রোমান্টিক বাতাসে যখন জেফ বেজোস ও সাংবাদিক লরেন সানচেজের বিলাসবহুল বিয়ের আয়োজন চলছিল, তখনই চুপিচুপি আরেকটি বড় আর্থিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা। জুনের শেষ সপ্তাহে তিনি বিক্রি করেছেন প্রায় ৩৩ লাখ অ্যামাজন শেয়ার যার বাজারমূল্য ৭৩৭ মিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৬৩১০ কোটি টাকা।
এই লেনদেন ছিল ‘10b5-1 ট্রেডিং প্ল্যান’-এর অংশ, যেটি বেজোস তৈরি করেছিলেন মার্চ ২০২৫-এ। এই পরিকল্পনার অধীনে তিনি মে ২০২৬ পর্যন্ত সর্বমোট ২.৫ কোটি শেয়ার বিক্রির ছাড়পত্র পেয়েছেন।
এদিকে মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত অ্যামাজনের শেয়ারে প্রায় ৮ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। বেজোস সর্বশেষ নভেম্বর ২০২৪-এ শেয়ার বিক্রি করেছিলেন, তখন প্রতি শেয়ারের দাম ছিল ২০৫ ডলার—যেটা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২৩.৫৬ ডলারে। সময়টা বেছে নেওয়ার পেছনে অর্থনৈতিক সূক্ষ্ম হিসাব নিশ্চয়ই কাজ করেছে।
বিয়ের আড়ালে বিতর্ক
ভেনিসের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে আয়োজিত বেজোস-সানচেজের বিয়েতে বিল গেটস, ওপ্রাহ উইনফ্রে-সহ প্রায় ২০০ অভিজাত অতিথি উপস্থিত ছিলেন। তিন দিন ধরে চলা এই আয়োজনের খরচ পড়েছে আনুমানিক ২০ থেকে ৫০ মিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ২ হাজার কোটি পর্যন্ত)। কিন্তু আনন্দময় এই আয়োজনে ছায়া ফেলেছে কিছু সমালোচনার সুর।
সেন্ট মার্ক স্কয়ারে গ্রিনপিস অ্যাক্টিভিস্টরা ব্যানার টাঙিয়ে সরাসরি প্রশ্ন তোলেন: “ধনীরা কর দেন না কেন?” কারণ হিসেবে উঠে এসেছে—২০২৪ সালে বেজোস ১৩.৬ বিলিয়ন ডলারের শেয়ার বিক্রি করলেও তিনি কেবল ৪.৫ শতাংশ কর দিয়েছেন।
কোথায় যায় এই বিপুল অর্থ?
বেজোস তার অর্থ খরচ করেন বেশ কিছু দিকেই। স্পেস ভেঞ্চার ব্লু অরিজিনকে ফান্ড করতে শেয়ার বিক্রির ঘটনা নতুন নয়। জানুয়ারিতে কোম্পানির রকেট উৎক্ষেপণ সফল হলেও ফেব্রুয়ারিতে ১০ শতাংশ কর্মী ছাঁটাইও করতে হয়েছে।
এছাড়াও ২০২৫ সালেই প্রায় ৯.৩ লাখ শেয়ার, যার বাজারমূল্য ১৯০ মিলিয়ন ডলার, তিনি দান করেছেন বিভিন্ন চ্যারিটিতে। রয়েছে বেজোস আর্থ ফান্ড ($10B) এবং ডে ওয়ান ফান্ড ($2B)-এর মতো উদ্যোগ।
বর্তমানে তার হাতে রয়েছে ৯০.৫ কোটি অ্যামাজন শেয়ার, যা কোম্পানির মোট ৯.৬ শতাংশ।
বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ ধনী
ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার্স ইনডেক্স অনুযায়ী, বেজোসের মোট সম্পদের পরিমাণ এখন ২৪১.৪ বিলিয়ন ডলার। এলন মাস্ক ও মার্ক জাকারবার্গের পর তিনিই বিশ্বের তৃতীয় ধনীতম ব্যক্তি।
বিয়ের আলোয় ঢাকা গেলেও, বেজোসের এই শেয়ার বিক্রির সময়জ্ঞান এবং বিতর্ক এড়িয়ে যাওয়ার কৌশল সত্যিই চোখে পড়ার মতো।