ভারতীয় ক্রিকেটের ‘গব্বর’ নামেই পরিচিত শিখর ধবন, পরিস্থিতি বুঝতে যেভাবে পারদর্শী ছিলেন, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। হয়তো ক্যারিয়ারটা একটু লম্বা হতে পারত, কিন্তু ধবনের মনে কোনো আফসোস নেই। ২০১৩ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে শুরু করে ২০২২ সালের শেষ ওয়ানডে পর্যন্ত, এই ফরম্যাটে তিনি ছিলেন ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক শুধু বিরাট কোহলি আর রোহিত শর্মা তার উপরে। রোহিতের সঙ্গে তার ওপেনিং জুটি, অনেকের মতে, শচীন-সৌরভের পর ভারতের সেরা জুটি ছিল।
তবুও ২০২২ সালে, বাংলাদেশ সফরের সময় ঈশান কিষাণ যখন ওয়ানডেতে দ্বিশতরান করলেন, তখনই ধবনের মনে হলো এটাই হয়তো শেষ। সেটা একরকম ভেতর থেকে অনুভব করেছিলেন তিনি। তারপর আর কাউকে ফোন করেননি, কোনো অভিযোগ করেননি। বন্ধুদের অনেকেই পাশে এসে দাঁড়ালেও, তিনি ছিলেন শান্ত চুপচাপ নিজের মতো সময়টা উপভোগ করছিলেন।
হিন্দুস্তান টাইমস-এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ধবন বলেন, "অনেক অর্ধশতরান করছিলাম, কিন্তু সেঞ্চুরি হচ্ছিল না। তখনই বুঝে গেছিলাম সম্ভবত সময় শেষ। ঈশান যখন দ্বিশতরান করল, ভেতর থেকে একটা কণ্ঠস্বর বলেছিল ‘তোমার সময় শেষ’... কিন্তু আমি একদম রিল্যাক্স ছিলাম।"
তবে শুরুটা সহজ ছিল না। ২০১০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সময়ে মাত্র ৫টি ওয়ানডে খেলে মাত্র ৬৯ রান করেছিলেন। একটা মাত্র টি-টোয়েন্টিতে করেন ৫ রান। অনেকেই তখন তাকে নিয়ে সন্দিহান ছিলেন।
কিন্তু ২০১৩ সালের মার্চ মাসে বদলে যায় সব। টেস্ট অভিষেকেই অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে মোহালিতে ৮৫ বলে সেঞ্চুরি করে তাক লাগিয়ে দেন তিনি। সেটাই ছিল ডেবিউ টেস্টে সবচেয়ে দ্রুততম শতরানের রেকর্ড। সেই ইনিংসে ১৮৭ রান করেছিলেন ধবন, স্ট্রাইক রেট ছিল ১০০-র ওপরে।
এরপর থেকে তিনি ভারতের সীমিত ওভার ক্রিকেটের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে যান। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০১৩-তে হন টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়। ২০১৫ বিশ্বকাপে ভারতের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক, আবার ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও।
তবে ২০১৮ সালের ইংল্যান্ড সফরের পর টেস্ট, আর ২০২১ সালে টি-টোয়েন্টি থেকে ধীরে ধীরে সরে যেতে হয় তাকে। ওয়ানডেতে পারফর্ম করেও ২০২৩ বিশ্বকাপ দলে জায়গা পাননি। শেষ ওয়ানডে খেলেন ১০ ডিসেম্বর ২০২২, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। সেটাই হয়ে যায় তার বিদায়ী ম্যাচ।
সবচেয়ে চমকপ্রদ বিষয়, এই ধাক্কার পরও ধবন একবারও নিজে থেকে কাউকে ফোন করেননি। বলেন, "আমি যা করেছিলাম, সেটায় সন্তুষ্ট ছিলাম। যে সময়টা কেটেছে, সেটা নিয়ে গর্ব আছে।"
আসলে ধবনের গল্পটা শুধুই রান আর রেকর্ডের নয় এটা একজন সংবেদনশীল, আত্মবিশ্বাসী ক্রিকেটারের যাত্রাপথ, যিনি বুঝেছিলেন কখন থেমে যেতে হয়।