মিচেল স্টার্কের ১৫ বলের তাণ্ডব, ভেঙে দিলেন ৭৮ বছরের রেকর্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ গুঁড়িয়ে ২৭ রানে

টেস্ট ক্রিকেটে ১০০তম ম্যাচ সাধারণত এমন একটা মাইলফলকে পৌঁছালে ক্রিকেটাররা একটু আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন, স্মৃতিমেদুর হয়ে ওঠে মাঠের প্রতিটি মুহূর্ত। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার গতি তারকা মিচেল স্টার্কের জন্য এটা ছিল যেন রীতিমতো এক যুদ্ধঘোষণা। ম্যাচটা শুধুই শততম ছিল না, তার ক্যারিয়ারের সেরা পারফরম্যান্সও এখানেই এল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে তৃতীয় টেস্টে এমন এক ঝড় তুললেন তিনি, ক্রিকেট ইতিহাসে নতুন করে লেখা পড়ল এক অধ্যায়।
দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ১৫টি বল হাতে নিয়ে স্টার্ক তুলে নিলেন পাঁচটি উইকেট হ্যাঁ, ঠিক শুনেছেন, মাত্র পনেরো বলে ‘ফাইফার’। এর ফলে টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে কম বলে পাঁচ উইকেট নেওয়ার নজির এখন তাঁর ঝুলিতে। ৭৮ বছর ধরে এই রেকর্ড ছিল অস্ট্রেলিয়ারই আরেক কিংবদন্তি, আর্নি তোশ্যাকের দখলে, যিনি ১৯৪৭ সালে ভারতের বিরুদ্ধে ১৯ বলে এই কীর্তি গড়েছিলেন। তোশ্যাকের রেকর্ড ছাড়াও ইংল্যান্ডের স্টুয়ার্ট ব্রড ও অস্ট্রেলিয়ার স্কট বোল্যান্ডও একই সংখ্যক বলেই (১৯) পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন, কিন্তু স্টার্ক এবার সবাইকে ছাপিয়ে গেলেন।
সেই ইনিংসে স্টার্ক মোট ৭.৩ ওভার বল করে দিলেন ৪টি মেডেন, মাত্র ৯ রান খরচ করে তুলে নিলেন ৬টি উইকেট। এমন বিধ্বংসী বোলিং আগে তাঁর কাছ থেকেও দেখা যায়নি। এটা তাঁর টেস্ট কেরিয়ারের সেরা বোলিং ফিগার যা শততম ম্যাচে এসে পাওয়া, নিঃসন্দেহে দারুণ গর্বের।
একইসঙ্গে, এই ম্যাচেই স্টার্ক নিজের টেস্ট কেরিয়ারে ৪০০ উইকেটের ক্লাবে ঢুকে পড়লেন। অনেক কিংবদন্তিরাই এই মাইলফলকে পৌঁছতে পারেননি। ১০০তম ম্যাচে এসে এমন কীর্তি – সেটা তো আর পরিকল্পনা করেও সম্ভব না। এটা ভাগ্য, পরিশ্রম আর নিঃসন্দেহে দক্ষতার মেলবন্ধন।
এই বলের হিসাব অনুযায়ী সবচেয়ে দ্রুত পাঁচ উইকেটের তালিকায় এখন স্টার্ক সবার ওপরে:
- ১৫ বল: মিচেল স্টার্ক বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ২০২৫
- ১৯ বল: আর্নি তোশ্যাক বনাম ভারত, ১৯৪৭
- ১৯ বল: স্টুয়ার্ট ব্রড বনাম অস্ট্রেলিয়া, ২০১৫
- ১৯ বল: স্কট বোল্যান্ড বনাম ইংল্যান্ড, ২০২১
- ২১ বল: শেন ওয়াটসন বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা, ২০১১
স্টার্কের আগুনে স্পেলে শেষ পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজ গুঁড়িয়ে গেল মাত্র ২৭ রানে। হ্যাঁ, টেস্ট ইতিহাসে এটা দ্বিতীয় সর্বনিম্ন ইনিংস স্কোর। ম্যাচটি শেষ হতে সময় লাগেনি। অস্ট্রেলিয়া সহজেই জিতে নিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজ ৩-০ ব্যবধানে নিজেদের করে নিল। একইসঙ্গে নতুন ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চক্র শুরু করল একেবারে রাজকীয় ভঙ্গিমায়।
এটা নিঃসন্দেহে সেই ধরনের পারফরম্যান্স যা বছর দশেক পরেও ক্রিকেটপ্রেমীরা মনে রাখবে। কিন্তু এরপরে প্রশ্ন ওঠে স্টার্ক কি এখানেই থেমে যাবেন? নাকি আরও কিছু অবাক করে দেওয়ার মতো মুহূর্ত এখনো বাকি আছে তাঁর হাতে?