বির্মিংহ্যামে ভারতের দাপট, ঐতিহাসিক জয়ের খুব কাছেই রোহিতবাহিনী

এজবাস্টনে ভারত-ইংল্যান্ড দ্বিতীয় টেস্টের চতুর্থ দিন ছিল পুরোপুরি ভারতের দখলে। দিনের শেষে ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ১৬ ওভারে ৭৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছে। ম্যাচে ভারতের এগিয়ে থাকা স্পষ্ট, আর এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।

শুভমান গিলের দুর্ধর্ষ ইনিংস

শুরুটা যেভাবে করেছিলেন, শেষটাও তেমনি ঝলমলে। প্রথম ইনিংসে বিশাল ২৬৯ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও থেমে থাকেননি শুভমান গিল। মাত্র ১৬২ বলে ১৬১ রান! বলের সঙ্গে প্রায় এক রানের গতি, যেখানে ছিল ১৩টি চার ও ৮টি ছয়। এক কথায়, চতুর্থ দিন তিনি একাই ম্যাচের রং বদলে দিয়েছেন।

রিশভ পন্তের সঙ্গে ১১০ এবং জাডেজার সঙ্গে ১৭৫ রানের পার্টনারশিপ গড়ে ভারতের ইনিংসকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়ে দেন গিল। একই টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি ও সেঞ্চুরি এই কৃতিত্ব এর আগে শুধু সুনীল গাভাসকর করেছিলেন। আর এখন সেই তালিকায় যুক্ত হল গিলের নামও। এই টেস্টে তাঁর মোট সংগ্রহ ৪৩০ রান একটি ম্যাচে কোনও ভারতীয় ব্যাটারের সর্বোচ্চ।

পন্ত, জাডেজা ও রাহুলের কার্যকর ইনিংস

শুধু গিল নন, বাকিদের পারফরম্যান্সও নজর কাড়ার মতো। কেএল রাহুল ৮৪ বলে ১০ চার মেরে করলেন ৫৫ রান তাঁর ১৮তম টেস্ট ফিফটি। পন্ত সেই পুরনো ছন্দে ফিরেছেন, ৫৮ বলে ৬৫ রান, যার মধ্যে ৮টি চার আর ৩টি বিশাল ছয়। আর শেষে এসে জাডেজা ছিলেন দৃঢ়, ১১৮ বলে ৬৯ রানে অপরাজিত থেকে যান। তিনিও একটি ছয় মারেন, সঙ্গে ৫টি চারের মার।

ইংল্যান্ডের সামনে পাহাড়সম লক্ষ্য

ভারত দ্বিতীয় ইনিংস ৬ উইকেটে ৪২৭ রানে ডিক্লেয়ার করে ইংল্যান্ডের সামনে ফেলে দিয়েছে এক অতিকায় চ্যালেঞ্জ ৬০৮ রানের। এমন লক্ষ্য টেস্ট ইতিহাসে কেউ কখনও তাড়া করতে পারেনি। ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংসে করেছিল ৪০৭, ফলে ভারতের লিড ছিল ১৮০ রানের। আর সেই লিডের ওপর দাঁড়িয়েই তৈরি হয়েছিল এই মহালক্ষ্য।

আকাশদীপের জোড়া আঘাত

দলে জসপ্রীত বুমরাহ না থাকলেও আকাশদীপ দারুণভাবে সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ইংল্যান্ডের ওপেনার বেন ডাকেট (২৫) ও জো রুট (৬)-কে বোল্ড করে ম্যাচে ভারসাম্যই নষ্ট করে দেন। অন্যদিকে, সিরাজ দ্বিতীয় ওভারেই জ্যাক ক্রলিকে (০) ফিরিয়ে দেন। দিনের শেষে ইংল্যান্ড ৭৩/৩, অপরাজিত পোপ (২৪) ও ব্রুক (১৫)। ভারতের জয় এখন শুধুই সাত উইকেট দূরে।

করুণ নায়ার আরেকবার ব্যর্থ

দীর্ঘ আট বছরের পর আবার ভারতীয় দলে ফেরা করুণ নায়ারের জন্য এই ম্যাচ বড় সুযোগ হতে পারত, কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসেও তিনি থিতু হয়েও গেলেন। ২৬ রান করে ফিরলেন, যদিও ৫টি চার মেরেছিলেন। কেএল রাহুলের সঙ্গে ৪৫ রানের জুটি হলেও সেটা ম্যাচের জন্য বড় প্রভাব ফেলেনি। প্রথম ইনিংসেও করেছিলেন মাত্র ৩১। আগের টেস্টে করেছেন ০ ও ২০। প্রশ্ন উঠতেই পারে এমন অস্থির ফর্মে তাঁর দলে থাকা কতটা যুক্তিযুক্ত?

সব মিলিয়ে, ভারত এখন ইতিহাস গড়ার পথে। এজবাস্টনে ভারতের টেস্ট জয় এখনও অধরা, কিন্তু এই ম্যাচে সে সম্ভাবনা জ্বলে উঠেছে। এখন শুধু ইংল্যান্ডের শেষ সাত ব্যাটারের গল্পটা জানা বাকি।