দু'টি টেস্টেই শিখরে গিল, এবার ব্র্যাডম্যান-গাভাসকরদের রেকর্ডে নজর

ভারতের টেস্ট দলের অধিনায়ক শুভমান গিল যেন এখন একেবারে অন্য রূপে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চলমান হোম সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচেই দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছেন তিনি। প্রথম টেস্টে দলের মোট স্কোর ছিল ৮৩৫ রান, দ্বিতীয় টেস্টে গিয়ে সেটা ছুঁয়েছে ১০১৪-তে। এই পাহাড়সম রান তোলার পেছনে বড় ভূমিকা ছিল গিলের ব্যাটে। প্রথম ইনিংসে খেলেছেন একটি দারুণ ডাবল সেঞ্চুরি, দ্বিতীয় ইনিংসেও থেমে থাকেননি তুলে নিয়েছেন আরেকটি শতরান। স্বভাবতই, সিরিজে সবচেয়ে বেশি রান তারই ঝুলিতে। আর এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে, গিল হয়তো ক্রিকেটের জীবন্ত কিংবদন্তি ডন ব্র্যাডম্যানের এক ঐতিহাসিক রেকর্ড ভেঙে ফেলতে পারেন। হ্যাঁ, শুনতে অবিশ্বাস্য লাগলেও, এখন সেটাই বাস্তব সম্ভাবনা।



ডন ব্র্যাডম্যান ১৯৩০ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচ টেস্টের সিরিজে করেছিলেন ৯৭৪ রান। সে সময় তার ব্যাট থেকে এসেছিল চারটি সেঞ্চুরি, যার মধ্যে একটি ইনিংসে সর্বোচ্চ ছিল ৩৩৪ রান। শুভমান গিলের সামনে সেই রেকর্ড টপকানোর সুযোগ রয়েছে। প্রথম দুই ম্যাচে তার সংগ্রহ ৫৮৫ রান, মানে বাকি তিন ম্যাচে আর ৩৯০ রান করলেই এই ইতিহাস ভেঙে দিতে পারবেন। দেখার বিষয়, শেষ পর্যন্ত পারেন কিনা কারণ ব্র্যাডম্যানের রেকর্ড তো আর রোজ কেউ ছুঁতে পারে না।

ভারতীয় ব্যাটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ড এখনো রয়েছে সুনীল গাভাসকরের দখলে। ১৯৭১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে চার ম্যাচে করেছিলেন ৭৭৪ রান। সেই রেকর্ড গত ৫৪ বছরেও কেউ স্পর্শ করতে পারেননি, এমনকি শচীন, দ্রাবিড় বা কোহলির মতো ব্যাটসম্যানও না। কিন্তু গিলের ব্যাটিং যেভাবে চলছে, তাতে এবার হয়তো সেই মাইলফলকও হাতছাড়া হয়ে যাবে গাভাসকরের। শুধু তাই নয়, গাভাসকর নিজেই দ্বিতীয় স্থানে আছেন ১৯৭৮-৭৯ সালে ছয় টেস্টে ৭৩২ রান করে। আর তৃতীয় স্থানে এখন রয়েছেন যশস্বী জয়সওয়াল, যিনি ২০২৩-২৪ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচে করেছিলেন ৭১২ রান।

একইসঙ্গে গিল ভেঙে দিয়েছেন কোহলির আরেক রেকর্ড। সিরিজের প্রথম দুই টেস্টে সবচেয়ে বেশি রান করার তালিকায় গিল এখন দ্বিতীয় স্থানে। তার উপরে আছেন কেবল গ্রেম স্মিথ, যিনি ২০০৩ সালে ইংল্যান্ডে ৬২১ রান করেছিলেন। কোহলির আগের রেকর্ড ছিল ৪৪৯ রান, যা গিল সহজেই ছাড়িয়ে গেছেন।

আরও এক দারুণ কীর্তি টেস্টের একটি ম্যাচে শতরান এবং দ্বিশতরান করা খুব কম ব্যাটারেরই আছে। গিল এই তালিকায় এবার যুক্ত হলেন। তার আগে ভারতীয়দের মধ্যে কেবল গাভাসকরই করেছিলেন এমনটা। এমনকি এক টেস্টে দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি করার কৃতিত্বও আছে তার নামে, যেটা এর আগে ভারতীয়দের মধ্যে গাভাসকর (১৯৭৮) এবং কোহলি (২০১৪) করেছিলেন।

সব মিলিয়ে, গিল শুধু বর্তমান প্রজন্মের নয়, ভবিষ্যতের ইতিহাসেও নিজের নাম লেখানোর দিকেই এগোচ্ছেন। তবে সামনে এখনো তিনটি টেস্ট বাকি, তাই সাফল্য ধরে রাখা এবং চাপ সামলানো দুইটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। গিল পারবেন কি? সময়ই বলবে। তবে সম্ভাবনা কিন্তু একেবারে উজ্জ্বল।

Previous Post Next Post